বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন তিন নারী রেফারি। কাতার বিশ্বকাপে তিন প্রধান রেফারির সাথে থাকছেন তিন সহকারী রেফারি।
সেই ১৯৩০ সাল থেকে নিয়মিত আয়োজন হয়ে আসছে ফুটবল বিশ্বকাপ। ৯ দশকে আয়োজিত ২২ টি আসরে রেফারির দায়িত্ব পালন করে আসছেন পুরুষ রেফারি।
তবে কাতারে শুরু হতে যাওয়া ফিফা বিশ্বকাপের ২২তম আসরে সেই প্রথা ভাঙতে চলেছে। বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যা নতুন এক দিগন্ত খুলে দেবে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপের জন্য ৩৬ রেফারির প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে জায়গায় করে নিয়েছেন তিন নারী রেফারি। তারা হলেন- ফ্রান্সের স্তেফানি ফ্রাপার্ট, জাপানের ইউশিমি ইয়ামাশিতা এবং রুয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা।
নিজে নিজ দেশে ঘরোয়া লিগে ছেলেদের শীর্ষ ফুটবল লিগ ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ম্যাচ পরিচালনাও করেছেন তারা। যার মধ্য দিয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন এই নারী রেফারি। আর এভাবেই জায়গা করে নিয়েছেন কাতার বিশ্বকাপের মঞ্চে।
আসুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক এই তিন ইতিহাস সৃষ্টিকারী নারী রেফারি সম্পর্কে কিছু তথ্য-
১. স্তেফানি ফ্রাপার্ট
ফ্রান্স ফুটবলে নারীদের ঘরোয়া লিগে রেফারি হিসেবে পথচলা শুরু স্তেফানি ফ্রাপার্টের। ২০১১ সালে প্রথম নারী রেফারি হিসেবে ফরাসি ফুটবলে পুরুষদের তৃতীয় ডিভিশন লিগে ম্যাচ পরিচালনা করেন তিনি। পরবর্তীতে ছেলেদের দ্বিতীয় বিভাগ এবং ২০১৯ সালে ফরাসি লিগা ওয়ানে ম্যাচ পরিচালনা করেন তিনি। আর এভাবেই ফুটবল ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেন ফ্রাপার্ট।
উল্লেখ্য, তিনি ২০১৫ এবং ১৯ নারী ফুটবল বিশ্বকাপেও রেফারি ছিলেন। প্রথম কোনও নারী রেফারি হিসেবে ২০১৯ সালে উয়েফা সুপার কাপের ফাইনালে লিভারপুল ও চেলসির ম্যাচের দায়িত্বে পালন করে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন ফ্রাপার্ট। ২০২০ সালে ছেলেদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও গত বছর ছেলেদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নেদারল্যান্ডস ও লাটভিয়ার ম্যাচ পরিচালনা করেন তিনি। গত ২ অক্টোবর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ এবং সেল্টিকের ম্যাচেও রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন ৩৮ বছর বয়সি ফ্রাপার্ট।
২. ইউশিমি ইয়ামাশিতা
আশ্চর্যজনকভাবে কোনও দিন রেফারি হতে চাননি ইয়ামাশিতা! আর সেই তিনিই কি না এবারের কাতার বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করে ইতিহাস রচনা করতে চলেছেন! একটা সময় কিছু সময়ের জন্য ফিটনেস ট্রেনার হিসেবে কাজ করছেন জাপানের ইউশিমি ইয়ামাশিতা। সেই চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তিনি রেফারিংয়ে নাম লেখান। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ম্যাচ পরিচালনার জন্য এক বন্ধু তাকে জোর করে ধরে নিয়ে মাঠে নামিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরের ইতিহাসটুকু সকলের জানা। ২০১৯ সালে প্রথম নারী রেফারি হিসেবে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একটি ম্যাচ পরিচালনা করেন তিনি। জাপানের ছেলেদের ফুটবলের সর্বোচ্চ লিগেও ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। যার সুফল হিসেবে বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন ৩৬ বছর বয়সি ইয়ামাশিতা।
৩. সালিমা মুকানসাঙ্গা
২০২২ সালের শুরুতেই ইতিহাস গড়েন রুয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা। ছেলেদের আফ্রিকান নেশন্স কাপে প্রথমবার নারী রেফারি হিসেবে ম্যাচ পরিচালনা করেন তিনি। এরপরই বদলে যায় মুকানসাঙ্গার দুনিয়া। সুযোগ আসে কাতারে বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার। কিন্তু এমন সুযোগের আশা যে কখনওই করেননি তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মুকানসাঙ্গা। কাতার বিশ্বকাপের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করা তার প্রধান লক্ষ্য। এরপর মুকানসাঙ্গার স্বপ্ন ২০২৩ নারী বিশ্বকাপের রেফারি হিসেবেও কাজ করার সুযোগ পাওয়া। একসময় বাস্কেটবল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সালিমা। কিন্তু রুয়ান্ডায় বাস্কেটবলে তেমন পরিকাঠামোই নেই। ফলে পরবর্তী সময়ে রেফারিংয়ে চলে আসেন তিনি। রেফারির কোর্স করে ২০ বছর বয়স থেকেই রুয়ান্ডার বিভিন্ন লিগে ম্যাচ পরিচালনা করতেন ৩৩ বছর বয়সি মুকানসাঙ্গা।